বর্তমান কিছু ইন্টারনেট গেম যেগুলো মানুষের মূল্যবান সময়কে নষ্ট করছে।হস্টেলে পাঠরত তোমার বোন কে সঠিক উপদেশ দিয়ে একটি চিঠি লেখো।
Answers
Answer:
স্নেহের,
ছোট বোন (আতিয়া)
পত্রের শুরুতে জানাই কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালের সবুজ ঘাসে শিশির বিন্দুর শোভাবর্ধনী স্নিগ্ধ শুভেচ্ছা। সেই সাথে জানাচ্ছি একগুচ্ছ কাশফুল ও শিউলিফুলের সংমিশ্রিত অকৃত্রিম ভালোবাসা।
তুমি হয়তো ভাবছো দু’রকম ফুলের কথা কেন বলেছি?
আসলে কাশফুল তোমার প্রিয় আর শিউলি আমার তাই দু’টোরই সংমিশ্রণ করে দিলাম।
তুমি তো জানোই সবাই তাদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব বা বিশেষ মানুষকে চিঠি লিখে। আর আমারও তুমি ছাড়া চিঠি লিখার মতো প্রিয় কেউ নেই। তাই কোনো কিছু না ভেবেই লিখতে বসেছি মনের মাঝে জমে থাকা এলোমেলো ভাবনাগুলো।
কেমন আছো? জানি খুব ভালো আছো। অনেক দিন পর কিছু লিখতে বসলাম। কিন্তু কী লিখবো? অবশ্য সবাই কত সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতে পারে। আমি তো গুছিয়ে কথাও বলতে পারি না, লেখা তো অনেক দূরের কথা। তবুও একরাশ দুঃখ ভরাক্রান্ত মনে বর্তমান সময়ে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া চিঠির প্রচলন নিয়ে কিছু লিখছি…
দিন দিন চিঠির প্রচলন হারিয়ে যাচ্ছে, মানুষ হয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তি নির্ভর। অতীতে যখন মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, বর্তমান জীবনের অবিচ্ছেদ্য উপকরণ তথ্য-প্রযুক্তির কোনো উপস্থিতি ছিল না, তখন চিঠি ছিল আত্মজাত মানুষদের জীবন-ঘনিষ্ঠ অনুষঙ্গ।
মানুষ তার মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে হৃদয়ছোঁয়া সবটুকু ভালোবাসা, প্রীতি, স্নেহ-মমতায় জড়ানো কল্পনার রঙে রঙীন করে সাজিয়ে চিঠি লিখতো। সেই চিঠিতে থাকতো শত আবেগ, অাকুলতা, হতাশা, আশা-আকাঙ্খার এক অন্যরকম অনুভূতির সংমিশ্রণ। সঙ্গে থাকতো চিঠির প্রতিউত্তর পাওয়ার জন্য দিনের পর দিন আবেগ জড়ানো অস্থির অপেক্ষা! কাজের ফাঁকে ফাঁকে বাহিরে কান পেতে থাকতো এই বুঝি ডাকপিয়ন এসে হাঁক দিবে “চিঠি এসেছে, চিঠি”…
কিন্তু দুঃখজনক হলেও নির্মম সত্য এটাই যে, আমরা আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যেয়ে হয়ে গিয়েছি ডিজিটাল। এখন আর নেই কোনো চিঠি লিখার তাড়া, ডাকবক্সে পোস্ট করার ঝামেলা আর ডাকপিয়নের চিঠি এসেছে হাঁক শোনার অধীর অপেক্ষা। এমনকি আমাদের বর্তমান জেনারেশনের অনেকেই জানে না চিঠি কী? হয়তো তারা বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষায় লিখার জন্যই চিঠি পড়ে থাকে, সেই চিঠিতে থাকে না কোনো আবেগ-অনুভূতি। তাদের জীবনটা সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছে ফেইসবুকের নীল সাদার দুনিয়ায় হাই-হ্যালো আর শুভেচ্ছাবার্তা পাঠানোর মধ্যেই। তারা হয়তো কখনো জানতেই পারবে না চিঠি লিখার পর অপেক্ষার প্রহর কতটা মধুর হয়। সেই সাথে তারা বঞ্চিত হচ্ছে চিঠির প্রতিউত্তর প্রাপ্তির আনন্দ থেকেও।
নিত্যনতুন তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সময়ে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় কলমের কালিতে কাগজের পাতায় চিঠি লেখার সময় বা প্রয়োজন কোনোটাই এখন আর নেই। এতে করে মানুষের উদ্বেগভাব, আশা-হতাশা, যাতনা-যন্ত্রনার উপশম হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কমে গেছে মায়া-মমতা, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা-সম্মান আর অপেক্ষার প্রহর।
আমরা আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে অনেকটা যান্ত্রিকতার মোড়কে আবেষ্টিত করে ফেলেছি। আধুনিক যন্ত্রসভ্যতা মানুষকে এক একটা মানব যন্ত্রে পরিণত করেছে। মানুষের মাঝের মানবিক গুনগুলো সব ধ্বংস করে মানুষকে এক একটা যন্ত্রদানবে পরিণত করছে। যান্ত্রিক শিল্পের উৎকৃষ্টতা সাধনের পেছনে সময় ব্যয় করতে গিয়ে আমরা হারিয়ে ফেলছি চিঠির মতো আমাদের আত্ম ঘনিষ্ঠ শিল্পগুলোকে। ফলস্বরূপ বিলীন হয়ে যাচ্ছে আমাদের অতীতের অনেক কার্যক্রমই।
সবশেষে বলবো, অনেক অনেক ভালো থাকো তুমি কোলাহলপূর্ণ শহরের এই যান্ত্রিকতার ভীড়ে। মহান আল্লাহ্ যেন সবসময় তোমাকে ভালো রাখেন। সকল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে নিজের লক্ষ্য অর্জন করতে পারার জন্য অনেক শুভকামনা রইল। আল্লাহ্ তা’আলা তোমার সহায় হোন।
অনেক কিছুই লিখে ফেলেছি, আজ এখানেই ইতি টানছি। তবে এটাই কিন্তু শেষ নয়, যখন ইচ্ছে হবে তখনই কাগজ আর কলম নিয়ে বসে পড়বো আমার মনের কথাগুলো লিখতে। আসো আমি, তুমি এবং আমরা সবাই আমাদের প্রিয়জনের কাছে চিঠি লিখি আর সমস্বরে বলি “চিঠির প্রচলন হয়নি শেষ, আছে কলম চলুক বেশ”।
ইতি,