প্রাকৃতিক প্রজনন কাকে বলে
Answers
Answer:
Explanation:
প্রতিটি জীব মৃত্যুর পূর্বে তার বংশধর রেখে যেতে চায়। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। যে জটিল প্রক্রিয়ায় জীব তর প্রতিরূপ বা বংশধর সৃষ্টি করে তাকে প্রজনন বা জনন বলে।[১] প্রজনন বা জনন প্রধানত দুই প্রকার, যথা—
অযৌন জনন ও
যৌন জনন।
অজৌন জনন
যে প্রক্রিয়ায় দুটি ভিন্নধর্মী জনন কোষের মিলন ছাড়াই জনন সম্পন্ন হয় তাই অজৌন জনন। নিম্নশ্রেণির জীবের অজৌন জননের প্রবণতা বেশি। অজৌন জনন প্রধণত দুই ধরনের। যথা– (১) স্পোর উৎপন্ন ও (২) অঙ্গজ জনন।
স্পোর উৎপন্ন
প্রধাণত নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদে স্পোর বা অণুবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে বংশ রক্ষা করার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। উদ্ভিদের দেহকোষ পরিবর্তিত হয়ে অণুবীজবাহী একটি অঙ্গের সৃষ্টি করে। এদের অণুজীবথলি বলে। একটি অণুবীজথলিতে সাধারণত অসংখ্য অণুবীজ থাকে। তবে কখনো কখনো একটি থলিতে একটি অণুবীজ থাকতে পারে। অণুবীজ থলির বাহিরেও উৎপন্ন হয়। এদের বহিঃঅণুবীজ। বহিঃঅণুবীজের কোনো কোনোটিকে কনিডিয়াম বলে। Mucor এর থলির মধ্যে অসংখ্য অণুবীজ উৎপন্ন হয়। Penicillium কনিডিয়া সৃষ্টির মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে।
অঙ্গজ জনন
কোনো ধরনের অযৌন রেণু বা জনন কোষ সৃষ্টি না করে দেহের অংশ খণ্ডিত হয়ে বা কোনো অঙ্গ রূপান্তরিত হয়ে যে জনন ঘটে তাকে অঙ্গজ জনন বলে। এ ধরনের জনন প্রাকৃতিক নিয়মে বা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটলে তাকে প্রাকৃতিক অঙ্গজ জনন বলে।
প্রাকৃতিক অঙ্গজ জনন
বিভিন্ন পদ্ধতিতে স্বাভাবিক নিয়মেই এ ধরনের অঙ্গজ জনন দেখা যায়, যেমন–
ক্রমিক নং জননের ধরন বর্ণনা
১. দেহের খণ্ডায়ন সাধারণত নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদে এ ধরনের জনন দেখা যায়। Spirogyra, Mucor ইত্যাদি উদ্ভিদের দেহ কোনো কারণে খণ্ডিত হলে, প্রতিটি খণ্ড একটি স্বাধীন উদ্ভিদ হিসেহে জীবনযাপন শুরু করে।
২. মূলের মাধ্যমে কোনো কোনো উদ্ভিদের মূল থেকে নতুন উদ্ভিদের সৃষ্টি হতে দেখা যায়, যেমন- পটল, সেগুন ইত্যাদি। কোনো কোনো মূল খাদ্য সঞ্চয়ের মাধ্যমে বেশ মোটা ও রসাল হয়। এর গায়ে কুঁড়ি সৃষ্টি হয় এবং তা থেকে নতুন উদ্ভিদ গজায়, যেমন- মিষ্টি আলু।
৩. রূপান্তরিত কাণ্ডের মাধ্যমে উদ্ভিদের কোন অংশকে কাণ্ড বলে তা আমরা সবাই জানি। তবে কিছু কাণ্ডের অবস্থান ও বাহিরের চেহারা দেখে তাকে কাণ্ড বলে মনেই হয় না। এরা পরিবর্তিত বা রূপান্তরিত কাণ্ড। বিভিন্ন প্রতিকূলতায়, খাদ্য সঞ্চয়ের ফলে কিংবা অঙ্গজ জননের প্রয়োজনে এরা পরিবর্তিত হয়।
এদের বিভিন্ন রূপ নিম্নে দেওয়া হলো :
ক্রম নাম ব্যাখ্যা
ক. টিউবার বা স্ফীত কন্দ কিছু কিছু উদ্ভিদে মাটির নিচের শাখার অগ্রভাগে খাদ্য সঞ্চয়ের ফলে স্ফীত হয়ে কন্দের সৃষ্টি করে, এদের টিউবার বলে। ভবিষ্যতে এ কন্দ জননের কাজ করে। কন্দের গায়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গর্ত থাকে। এগুলো দেখতে চোখের মতো তাই এদের ‘চোখ’ বলা হয়। একটি চোখের মধ্যে একটি কুঁড়ি থাকে। আঁশের মতো অসবুজ পাতার (শল্কপত্র) কক্ষে এসব কুঁড়ি জন্মে। প্রতিটি চোখ থেকে একটি স্বাধীন উদ্ভিদের জন্ম হয়, যেমন- গোল আলু।
খ. রাইজোম এরা মাটির নিচে সমান্তরালভাবে অবস্থান করে। কাণ্ডের মতো এদের পর্ব, পর্বসন্ধি স্পষ্ট। পর্বসন্ধিতে শল্কপত্রের কক্ষে কাক্ষিক মুকুল জন্মে। এরাও খাদ্য সঞ্চয় করে মোটা ও রসাল হয়। অনুকূল পরিবেশে এসভ মুকুল বৃদ্ধি পেয়ে আলাদা আলাদা উদ্ভিদ উৎপন্ন করে, যেমন- আদা,হলুদ।
গ. কন্দ (বাল্ব) এরা অতি ক্ষুদ্র কাণ্ড। এদের কাক্ষিক ও শীর্ষ মুকুল নতুন উদ্ভিদের জন্ম দেয়, যেমন- পিঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি।
ঘ. স্টোলন কচুতে লতি থাকে। এরা কচুর শাখা কাণ্ড। এগুলো জননের জন্যই পরিবর্তিত হয়। স্টোলনের অগ্রভাগে মুকুল উৎপন্ন হয়। এভাবে স্টোলন উদ্ভিদের জননে সাহায্য করে; যেমন- কচু, পুদিনা ইত্যাদি।
ঙ. আফসেট কচুরিপানা, টোপাপানা ইত্যাদি জলল উদ্ভিদের শাখা কাণ্ড বৃদ্ধি পেয়ে একটি নতুন উদ্ভিদ উৎপন্ন করে। কিছুদিন পর মাতৃউদ্ভিদ থেকে এটি বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন উদ্ভিদে পরিণত হয়; যেমন- কচুরিপানা।
চ. বুলবিল কোনো কোনো উদ্ভিদের কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি যথাযথভাবে না হয়ে একটি পিণ্ডের মতো আকার ধারণ করে। এদের বুলবিল বলে। এসব বুলবিল কিছুদিন পর গাছ থেকে খসে মাটিতে পড়ে এবং নতুন গাছের জন্ম দেয়; যেমন- চুপড়ি আলু।
৪. পাতার মাধ্যমে কখনো কখনো পাতার কিনারায় মুকুল সৃষ্টি হয়ে নতুন উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়। যেমন- পাথরকুচি।
এতক্ষণ যেসব প্রক্রিয়ার কথা বলা হলো তা প্রাকৃতিকভাবেই ঘটে। অঙ্গজ জননে উৎপাদিত উদ্ভিদ মাতৃউদ্ভিদের মতো গুণ সম্পন্ন হয়। এর ফলে কোনো নতুন বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ ঘটে না। উন্নত গুণসম্পন্ন অর্থকরী ফসলের ক্ষেত্রে তাই অনেক সময় কৃত্রিম অঙ্গজ জনন ঘটানো হয়।