Hindi, asked by ujankarmakar456, 6 months ago

বিপর্যয় মোকাবিলায় ছাত্র সমাজের ভূমিকা​

Answers

Answered by Bipasha2007
6

Answer:

আজ ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য—‘জরুরি পরিস্থিতিতে অরক্ষিত মানুষজন’। এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রেক্ষাপটে এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিশ্বের প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলোর অন্তত ৮০ শতাংশই এখানে ঘটে (ইউএনএফপিএ ২০১৪)। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রবণতা বেশি। দেশটির সীমান্তের অধিকাংশই পার্বত্য এলাকা, এখানে নদ-নদীর সংখ্যা বেশি এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের অবস্থান। বন্যা ও খরা থেকে শুরু করে ঘূর্ণিঝড় ও নদীভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছরই হয়ে থাকে। আর এসবের প্রভাব পড়ে দেশটির বিভিন্ন অংশে বসবাসকারী মানুষের জীবনের ওপর।

বিশ্বের যেকোনো জায়গায় যখন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে, তখন বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। এদের মধ্যে অন্তত ৭৫ শতাংশ হচ্ছে নারী, শিশু ও অল্পবয়সী মানুষজন। সংকটময় পরিস্থিতিতে কিশোরী ও নারীরা অন্যদের চেয়ে বেশি নিপীড়ন, যৌন নির্যাতন, সহিংসতা, জোরপূর্বক বিয়ে, প্রজননস্বাস্থ্য-সংক্রান্ত অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকে।

জরুরি পরিস্থিতিতে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা একটি গুরুতর হুমকি। কোনো বিপর্যয়ের পরে সামাজিক কাঠামো ভেঙে যাওয়ার ফলে এমন একটি পরিবেশ তৈরি হয়, যেখানে নারীরা তুলনামূলক বেশি জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। কিশোরী ও নারীদের অরক্ষিত হওয়ার কারণ হিসেবে নিরাপত্তার অভাব এবং জরুরি পরিস্থিতিতে তাদের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটানোর ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি না থাকাটাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ এবং বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগের সময় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দ্রুত ছুটে যেতে হয় বলে তারা আহত হওয়া বা মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।

গ্লোবাল হিউম্যানিটারিয়ান ফোরামের ২০০৯ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে নিহত মানুষের ৯০ শতাংশই নারী। ওই বিপর্যয়ের পর এ রকম পরিস্থিতিতে নারীদের আশ্রয় দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা পূরণের ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তবু সামাজিক নিয়মকানুনের কিছু কিছু বিষয় অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। যেমন, পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে অন্যদের যত্ন বা পরিচর্যা করার বড় দায়িত্বগুলো এখনো নারীর কাঁধেই পড়ে। তবু তাঁদের সামাজিক ও আইনি মর্যাদা সীমিত। ফলে সংকটময় পরিস্থিতি দেখা দিলে তাঁরা নিজেদের সুরক্ষার জন্য পুঁজি, সামাজিক সম্পদ এবং অন্যান্য আইনি সুবিধা পাওয়ার সুযোগ তুলনামূলকভাবে কম পান।

কিশোর ও যুবকেরাও দুর্যোগের আগে ও পরে একই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। তাদের সুনির্দিষ্ট কিছু চাহিদা প্রায়ই উপেক্ষিত হয়। বাংলাদেশে ২০১২ সালে বেসরকারি সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের এক গবেষণায় কিশোর ও তরুণ বয়সীদের জন্য দুর্যোগ-পরবর্তী সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘাটতিগুলো স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষ করে, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন সেবা ও অধিকার (এসআরএইচআর) এবং নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। এ গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা উল্লেখ করেছেন, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য ও সেবা পাওয়া খুবই কঠিন। এ ছাড়া প্রজনন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সংক্রমণ , যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য ও যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনার জন্য নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের পাওয়া যায় না বলে তাঁরা উল্লেখ করেছেন।

সম্প্রতি প্রকাশিত হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি প্রতিবেদনে (২০১৫) প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দারিদ্র্য ও বাল্যবিবাহের মধ্যে স্পষ্ট যোগসূত্র থাকার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এমন অনেক পরিবার আছে, যারা সম্ভাব্য দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে অল্পবয়সী মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে আশ্রয়কেন্দ্র বা শরণার্থীশিবিরে কিশোরী ও নারীরাই হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অনেক ক্ষেত্রে কিশোরীরা মানসিক, শারীরিক, যৌন ও সামাজিক হয়রানির মুখোমুখি হচ্ছে, বিশেষ করে রাতের বেলায়। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে আশ্রয়, খাবার ও সাধারণ স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা যেমন জরুরি, তেমনি প্রত্যেকের যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করাটাও অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়ে বেঁচে যাওয়া নারীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত এবং এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারেই নেই।

দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রচেষ্টায় কিশোর ও তরুণদের অন্তর্ভুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক পদক্ষেপ। এই বয়সীদের সহনশীলতা ও শক্তি সাধারণত বয়স্কদের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। এই শক্তিকে কাজে লাগানোর ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ। যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যসেবা ও অধিকার এসব বিষয় সম্পর্কে তরুণেরা যাতে অন্যদের শেখাতে পারে, সে জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। এতে তারা দুর্যোগকালীন জরুরি পরিস্থিতিতে সেবামূলক কাজে কার্যকরভাবে অংশ নিতে পারবে।

ইউএনএফপিএর একটি প্রতিবেদন থেকে অনূদিত

Answered by ij3672913
0

Answer:

বিপরযয় মোকাবিলাই শিক্ষার্থিদের

Explanation:

Similar questions