মধ্য অক্ষাংশের ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি ও গঠন ব্যাখ্যা করো।
Answers
ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত - উভয় গোলার্ধের ক্রান্তীয় অঞ্চলে ৫ ডিগ্রি থেকে ২০ ডিগ্রি উত্তর ও দক্ষিন অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে অধিকাংশ ক্রান্তীয় ঘূর্নবাত সংঘটিত হয়। এই অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে অত্যাধিক উষ্ণতার জন্য সমুদ্রপৃষ্টের উপরিভাগের বায়ু উষ্ণ ও হালকা হয়ে ওপরের দিকে উঠে যায়। ফলে এই অঞ্চলে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। তখন চারপাশের অপেক্ষাকৃত শীত ও ভারী বায়ু প্রবল গতিবেগে কুন্ডলির আকারে ঘুরতে ঘুরতে এইরূপ গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ধেয়ে আসে। ক্রান্তীয় অঞ্চলে এইরূপ প্রবল গতি সম্পন্ন কেন্দ্রমুখী ঘূর্নায়মান ঊর্দ্ধগামী বায়ু প্রবাহকে ক্রান্তীয় ঘূর্নবাত বলে। ক্রান্তীয় ঘূর্নিঝর বা ঘূর্নবাতের কেন্দ্রে গভীর নিম্নচাপের উপস্থিতি দেখা যায়। যা ক্যাটাগরি -১ ঘূর্নবাতের ক্ষেত্রে ৯৮০ মিলিবার মতো ও ক্যাটাগরি -৫ ঘূর্নবাতের ক্ষেত্রে ৯২০ মিলিবারে নেমে যায়।
ক্রান্তীয় ঘূর্নিঝরের বৈশিষ্ট্য
১. ক্রান্তীয় ঘূর্নিবাতকে ঘিরে সমচাপ রেখা গুলির আকৃতি গোলাকার হয়।
২. বায়ুর গতিবেগ প্রতি ঘণ্টা ৫০ কিমি থেকে ৩০০ কিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
৩. ক্রান্তীয় ঘূর্নবাত সাধারণত গ্রীষ্ম ও শরৎ কালে বেশি দেখা যায়।
৪. এই ঘূর্নিঝরের কেন্দ্রে চক্ষুর অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। যার ব্যাস ১০ থেকে ৪০ কিমি হয়ে থাকে।
৫. ক্রান্তীয় ঘুর্নিবাতের সাথে প্রতীপ ঘূর্নবাতের আগমন হয় না।
৬. ক্রান্তীয় ঘূর্নবাতের ব্যাস ১৫০ থেকে ৩০০ কিমি হয়ে থাকে।
৭. এই ঘূর্নবাতের সাথে উষ্ণ ও শীতল সীমান্তের কোনো সম্পর্ক নেই ।
৮. লীনতাপ এই ঘূর্নবাতের শক্তির প্রধান উৎস।
৯. কিউমুলোনিম্বাস মেঘের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
১০. এই ঘূর্নবাত মানুষ ও সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি করে।
ক্রান্তীয় ঘূর্নবাত সৃষ্টির অনুকূল ভৌগোলিক শর্ত
১. সমুদ্র পৃষ্টের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হবে।
২. কোরিওলিস শক্তির বিদ্যমানতা
৩. পূর্বস্থিত দূর্বল নিম্নচাপ অঞ্চল
৪. উপরি স্তরে প্রতীপ ঘূর্নবাত অর্থাৎ বায়ুর বহিঃমুখী গমন
ক্রান্তীয় ঘূর্নবাতের অন্যতম সঞ্চালক লীনতাপের উৎস
২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বিশিস্ট সমুদ্র জলের গভীরতা থাকে ৬০ থেকে ৭০ মিটার, যা যথেষ্ট আদ্রতার সরবরাহ করে, ফলে ঘনীভবন জনিত লীনতাপের যোগান অব্যাহত থাকে। এই লীনতাপ ক্রান্তীয় ঘূর্নবাত ত্বরান্বিত করে।
মহাসাগরের পশ্চিমদিকে বেশি ঘূর্নবাত সৃষ্টির মূল কারণ
ক্রান্তীয় অঞ্চলে পূর্বালি বানিজ্যবায়ুর (Trade Wind) প্রভাবে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বিশিষ্ট সমুদ্র স্রোত পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে মহাসাগরের পশ্চিমদিকে উষ্ণ জলের একটি গভীর স্তর গঠন করে। যার ফলে মহাসাগরের পশ্চিমদিকে বেশি ঘূর্নবাত সৃষ্টি হয়।
মহাসাগরের পূর্বদিকে ঘূর্নবাত সৃষ্টি না হওয়ার মূল কারণ
মহাসাগর গুলির পূর্ব দিকে শীতল স্রোতের উপস্থিতি, সমুদ্র জলের উষ্ণতা অনেকটা কমিয়ে দেয়। তাই ঘূর্নবাত সৃষ্টির জন্য অনুকূল পরিবেশে না থাকায় ঘূর্নবাত সৃষ্টি হয় না।
ব্যতিক্রম ঘটনা – কোনো কোনো বছর এল নিনোর উপস্থিতির জন্য প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম দিকে হ্যারিকেনের সৃষ্টি হয়।