একাত্তরের ভয়াবহ ও বিভীষিকাময় সময় সম্পর্কে লিখ
Answers
ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই পরাজয়ের ভীতি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল ঢাকায় পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাদের ভেতর।
তখনকার ঘটনাবলী খুব কাছ থেকে দেখেছেন পূর্ব পাকিস্তানে গভর্নর ডা. এম এ মালিকের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিক।
রাও ফরমান আলী তার বই "হাউ পাকিস্তান গট ডিভাইডেড" এবং সিদ্দিক সালিক তার লেখা লেখা 'উইটনেস টু সারেন্ডার' বইয়ে সেই সময়কার ঘটনাবলীর বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন, জানিয়েছেন ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে তখন পরিস্থিতি কেমন ছিল।
ডিসেম্বরের দুই তারিখে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর চীফ অব স্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খানের ঢাকায় আসার কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে জানানো হয় তিনি আসবেন না। সেই খবরে যুদ্ধের পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে অনেকেই পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান।
রাও ফরমান আলীর বর্ণনা অনুযায়ী, যেদিন ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হয়, সেই ৩রা ডিসেম্বর লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজীকে বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল।
''কারো মধ্যে কোন আতঙ্ক ছিল না। সবাই খুব আস্থার সঙ্গে কথা বলছিলেন। অসামরিক সরকারের কাছ থেকে তারা কিছু প্রত্যাশা করেন কি-না, জানতে চাইলে জেনারেল নিয়াজী বলেন, আমরা আমাদের দেখাশোনা করতে পারবো। আমাদের সব কিছুই আছে।''
কিন্তু খুব দ্রুতই সেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলায় পাকিস্তান বাহিনীর সবগুলো বিমান অকেজো হয়ে পড়ে।
ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখে কুমিল্লার দক্ষিণ অঞ্চলে একটি পাকিস্তানী ব্যাটালিয়নের আত্মসমর্পণের পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বুঝতে পারলেন যে তাদের সৈন্যদের মনোবল ভেঙ্গে গেছে।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES
ছবির ক্যাপশান,
যুদ্ধের সময় যশোর রোডের সড়ক মেরামত করছেন ভারতীয় সেনারা
জেনারেল নিয়াজী সন্দেহাতীতভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন। অনেকে জেনারেল নিয়াজীকে তাঁর অফিসে কাঁদতেও দেখেছে বলে দাবী করেন রাও ফরমান আলী।
কিন্তু বাইরে থেকে জেনারেল নিয়াজী নিজেকে শক্ত হিসেবে উপস্থাপন করছিলেন।
পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার জন্য ৭ই ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজীকে ডেকে পাঠান পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডা. এম এ মালেক, জেনারেল রাও ফরমান আলী লিখেছেন "হাউ পাকিস্তান গট ডিভাইডেড" বইয়ে।
''গভর্নর বলতে শুরু করেন, যুদ্ধে যে কোনও কিছুই ঘটতে পারে। যখন দুটি পক্ষ যুদ্ধ শুরু করে, তখন একপক্ষ জেতে, অন্য পক্ষ হেরে যেতে পারে। কোনও সময় একজন কমান্ডারকে আত্মসমর্পণ করতে হতে পারে, এবং অন্য সময় .... গভর্নর আরও কিছু বলার আগে আমি একটি চিৎকার, একটি কান্না এবং উচ্চ শব্দে ফোঁপানো শুনতে পেলাম।
আমি দেখলাম, নিয়াজী তাঁর দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রয়েছেন এবং কাঁদছেন।
সেই সময় কক্ষে আসা একজন পরিচারক চা নিয়ে প্রবেশ করছিল, তাকে দ্রুত বের করে দেয়া হয়। সে বাইরে গিয়ে বলেন, সাহেবরা ভেতরে কান্নাকাটি করছেন।
এই খবরটি দ্রুত ঢাকার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। যা থেকে পাকিস্তান আর্মির ভয়াবহ ও মরিয়া অবস্থার কথাই প্রকাশিত হয়ে পড়েছিল।''