প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মানুষের অসহায়তা রচনা
Answers
বাংলা রচনা নিয়ে এসেছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি বিশেষ ই-বুক। একান্ত নির্ভরযোগ্য প্রবন্ধ রচনার উত্তরসহ সাজেশন। অতি সামান্য মূল্যে এই বইটি কিনতে এখানে ক্লিক করুন।
আদিম যুগে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছে মানুষ ছিল বড়োই অসহায়। কিন্তু মানুষ তার বুদ্ধির বলে প্রকৃতির উপকরণকে কাজে লাগিয়ে প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে এ পরিবেশকে নিজের বাসযোগ্য করে তুলেছে। সভ্যতার উপর প্রকৃতির খেয়ালে ঘটে যাওয়া নানান বিপর্যয় এবং এই বিপর্যয় থেকে বাঁচার জন্য সম্ভাব্য প্রতিকারের খোঁজেই আজকের উপস্থাপনা প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও তার প্রতিকার রচনা।
ভূমিকা:
পৃথিবীতে সৃষ্টি তথা স্থিতির পাশাপাশি প্রলয়ও একইভাবে বিরাজমান। পৃথিবীর উপর সভ্যতার বোঝা যখন স্থানুর মতন চেপে বসে, হয়তো তখনই বিশ্বের মাথার উপর নেমে আসে বিপর্যয়ের খাঁড়া। আর তেমনই এক একটি বিপর্যয় আপন বিধ্বংসী মহিমায় একটি সভ্যতাকে করে দিতে পারে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত।
এই পৃথিবীতে বিপর্যয়কে মোটামুটি দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়, আর অন্যটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়। প্রকৃতির রোষানলের কাছে মানুষ যে কত অসহায় এই সকল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলে মানুষ অনুধাবন করতে পারে।
সভ্যতার আস্ফালন যতই তীব্র হোক না কেন প্রকৃতির অনন্ত শক্তির কাছে তা অতি তুচ্ছ। সভ্যতার উপর প্রকৃতির খেয়ালে ঘটে যাওয়া এই সকল বিপর্যয় এবং এই বিপর্যয় থেকে বাঁচার জন্য সম্ভাব্য প্রতিকারের খোঁজেই এই প্রতিবেদনের উপস্থাপনা।
বাংলা রচনা নিয়ে এসেছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি বিশেষ ই-বুক। একান্ত নির্ভরযোগ্য প্রবন্ধ রচনার উত্তরসহ সাজেশন। অতি সামান্য মূল্যে এই বইটি কিনতে এখানে ক্লিক করুন।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সংজ্ঞা:
প্রাকৃতিক বিপর্যয় সম্পর্কে বিশদ আলোচনার পূর্বে এর সংজ্ঞা নিরূপণ করা একান্ত প্রয়োজন। নচেৎ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য অনুধাবন করা সহজ হবে না। প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলো মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে প্রকৃতির নিজস্ব খেয়াল অনুসারে পরিচালিত এমন এক বিধ্বংসী প্রক্রিয়া যা বিপুল পরিমাণ পার্থিব সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি এবং মানুষ তথা অন্যান্য প্রাণীর জীবনহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এই ধরনের বিপর্যয় বলতে প্রকৃতির সেই রুদ্ররোষকে বোঝানো হয় যার প্রলয়ংকারী গ্রাসে তলিয়ে গিয়ে মানব সভ্যতা তথা জীবজগতের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সাময়িকভাবে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। তবে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত সংজ্ঞা অনুসারে সম্পদহানি কিংবা জীবনহানি না ঘটলে কোন প্রাকৃতিক গঠনমূলক প্রক্রিয়াকে বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রকারভেদ:
প্রকৃতির খেয়াল বোঝা অত্যন্ত কঠিন। তাই এই খেয়ালের রুদ্ররোষের প্রকার নির্ধারণ করাও খানিক দুঃসহ। প্রাচীন বৈদিক ধারণা অনুসারে এই পৃথিবী মোট পাঁচটি মৌলিক উপাদান বা পঞ্চভূত দ্বারা গঠিত। এই উপাদান গুলি হল ক্ষিতি বা ভূমি, অপ বা জল, তেজ অর্থাৎ অগ্নি, মরুৎ বা বায়ু এবং ব্যোম অর্থাৎ আকাশ।
পৃথিবীর গঠনগত এইসব কয়টি উপাদান পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং এই গঠনগত উপাদানগুলিই হল সকল বিপর্যয়ের মূল উৎস। তাই এই উৎসগুলির উপর ভিত্তি করেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কয়েকটি প্রকার চিহ্নিত করা যায়। সেই প্রকারগুলি সম্বন্ধে নিম্নে আলোচনা করা হল।
বিপর্যয় রূপে ঝড়:
পৃথিবীর একটি অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলো বিধ্বংসী ঝড়। এই ঝড়ের মূলগত উৎস হল সৃষ্টির অন্যতম মৌলিক উপাদান মরুৎ বা বায়ু। প্রকৃতির নিজস্ব খেয়াল অনুসারে বায়ু যখন কোন নির্দিষ্ট ভঙ্গিমায় কিংবা এলোমেলোভাবে ভীষণ গতিতে বইতে থাকে তখন তাকে আমরা ঝড় বলে চিনি। প্রাকৃতিক বিপর্যয় রূপে এই ঝড় বিভিন্ন রকমের হতে পারে।
স্থানগত বৈশিষ্ট্য অনুসারে বিজ্ঞানীরা কোথাও এই ধরনের ঝড়কে টর্নেডো, কোথাও হারিকেন, কোথাও বা টাইফুন, আবার কোথাও সাইক্লোন বলে অভিহিত করে থাকেন। আমাদের মতন সমুদ্র উপকূলবর্তী ভূখণ্ডের মানুষেরা ঝড়ের প্রকোপের সঙ্গে সুপরিচিত। প্রতিবছরই একের অধিক ঘূর্ণিঝড় এখানে দেখা যায়।
বঙ্গোপসাগরে উপকূলবর্তী অঞ্চলে এই ধরনের ঝড় সাইক্লোন নামে পরিচিত। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে চলতে থাকা অসংখ্য ঝড়ের প্রকোপে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং জীবনহানি হয়ে থাকে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এমন একটি ঝড়ের মধ্যে আমফান সুপার সাইক্লোন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
করাল বন্যা:
বন্যা হলো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের তালিকায় অন্যতম প্রধান একটি প্রকার। বন্যার কারণ বিভিন্ন হতে পারে। কখনো অতিবৃষ্টির ফলে নদী কুল ছাপিয়ে গিয়ে উপকূলবর্তী অঞ্চল জলে ভেসে গিয়ে বন্যা দেখা দিতে পারে। আবার কখনো বাঁধ থেকে অতিমাত্রায় জল ছাড়ার ফলেও বন্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়া বন্যার আধুনিকতম কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে প্রাকৃতিক নদী পথের ওপর মানুষের নির্বিচার শোষণ। বন্যার ফলে জনজীবন বেশ কিছুদিনের জন্য সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়। সকল ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। এছাড়া মানুষ গৃহহারা হয়, কৃষক ক্ষেতহারা হয়; ফলে সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, অসংখ্য মানুষ করাল বন্যার ছোবলে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
সর্বনাশা খরা:
এই পৃথিবীতে সাদা-কালো, ভালো-মন্দ ইত্যাদি পরস্পরবিরোধী সত্তা সমান্তরালভাবে বর্তমান। তেমনি পৃথিবীতে বর্তমান প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের তালিকাতেও একদিকে যেমন অতিবৃষ্টির ফলে বন্যার নিদর্শন রয়েছে, অন্যদিকে আবার অনাবৃষ্টির কারণে ঘটা খরার উদাহরণ রয়েছে। পৃথিবীর কোন স্থান যখন একদিকে বন্যায় ভেসে যায়, অপরদিকে আবার সেই পৃথিবীর অন্য কোন প্রান্ত খরার প্রকোপে প্রখর সূর্যতাপে ফুটিফাটা হয়।
এ বিশ্বে খরা অসংখ্য মানুষের জন্য অভিশাপ বয়ে নিয়ে আসে। খরা হল দীর্ঘকালীন অনাবৃষ্টির ফলে পৃথিবীর বুকে নেমে আসা বিপর্যয়। পৃথিবীতে এ বিপর্যয়ের প্রকোপ বিশেষভাবে অনুভব করতে পারেন কৃষকেরা। পৃথিবীর মাটি এসময় ফুটিফাটা হয়ে যায়, ফসল শুকিয়ে যায়, উদ্ভিদ সহ সমস্ত প্রাণীকুল একটুখানি জল পাবার তেষ্টায় ধুঁকতে থাকে। বিশ্ব গঠনের অপর এক মৌলিক উপাদান ‘তেজ’ দ্বারা উদ্ভূত এই খরার রূপ সর্বনাশা।
ভূমিকা :- " মন্বন্তরে মরিনি আমরা, মারি নিয়ে ঘর করি "— বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, মহামারী মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে । অথচ বিজ্ঞানের বলে বলিয়ান আমরা সদর্পে বলে চলেছি যে, প্রকৃতি আমাদের হাতের মুঠোয়, প্রকৃতি আমাদের কাছে বশীভূত । কিন্তু এ দর্প বা ধারণা সত্য নয় । মাঝে মধ্যেই প্রকৃতির রুদ্ররোষের কাছে মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে । তখন বিজ্ঞান-প্রযুক্তি আর কোন কাজে আসে না । যে প্রকৃতি সৃষ্টির আনন্দে উদ্বেল, আবার সেই ধ্বংসের মারণযজ্ঞে মেতে ওঠে কখনো কখনো । এই ধ্বংসকারিণী রূপের বর্ণনা কেই বলা হয় প্রাকৃতিক বিপর্যয় ।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নানান রূপ :- প্রাকৃতিক বিপর্যয় নানারূপে এই পৃথিবীর বুকে নেমে আসে । কখনো অতি বর্ষণের ফলে বন্যারূপে দেখা দেয় । কখনও প্রবল তান্ডবের সঙ্গে গগন ভেদ করে ভয়ংকর সামুদ্রিক ঝড় সবকিছু তছনছ করে দেয় । আবার অনাবৃষ্টির ফলে খরা দেখা যায় । যার ফলে মাঠ ঘাট ফেটে চৌচির হয়ে যায় । ফল, ফুল,ফসলের অকাল মৃত্যু ঘটে । এছাড়াও ভূমিকম্পও নেমে আসে পৃথিবীর বুকে । অবলীলায় বহু প্রাণ চলে যায়, ক্ষতি হয় প্রচুর ।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় রূপে বন্যা :- বন্যার প্রধান কারণ হল অতি বর্ষণ এবং পরিকল্পনাহীন নদী বাঁধ প্রকল্প । জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এবং কলকারখানায় ও চাষের প্রয়োজনে সারা বছর জল সরবরাহের জন্য নদীতে বাঁধ দেওয়া হয় । কিন্তু এই বাঁধ সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করার ফলে বর্ষার সময় জলস্ফীতি দেখা দেয় এবং বন্যা হয় । এছাড়া নদী-নালা, খাল-বিল গুলোও সংস্কার না হওয়ায় বন্যা হয় ।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় রূপে ঝড় :- প্রাকৃতিক বিপর্যয় রুপে ঝড় ও অত্যন্ত ক্ষতিকর ও মারাত্মক । সমুদ্রের জল সূর্যের তাপে অত্যন্ত গরম হওয়ার ফলে বাষ্পীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় তখন প্রবল ঝড় সমুদ্র উপকূলের নিকটে গ্রাম শহরে আছড়ে পড়ে সুপার সাইক্লোন, আয়লা, নার্গিস এর মত প্রবল ঝড়ে বহু মানুষের প্রাণ যায় এবং সম্পদ বিনষ্ট হয় ।
ভূমিকম্প :- প্রাকৃতিক বিপর্যয় রূপে ভূমিকম্প মানুষকে অসহায় করে তোলে । নিমিষে সাধের সৌধ মানুষের আবাসভূমি ধুলিসাৎ হয়ে যায় ভূমিকম্পের কবলে পড়ে । সাম্প্রতিককালে নেপালে ঘটে যায় ভয়াবহ ভূমিকম্প ।