গৃহ বলতে নারীদেরই একটি কি নেই?
Answers
Answer:
সেবামূলক কাজকেই আসলে ঘর-গৃহস্থালির কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে এই গবেষণায়৷ এর মধ্যে মূলত ছয় ধরনের কাজকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে৷ ১. রান্না করা, ২. বয়স্কদের সেবা করা, ৩. শিশু লালন পালন, ৪. পানি আনা, ৫. জ্বালানি সংগ্রহ করা, ৬. ঘরের অন্যান্য কাজ যেমন – বিছানা পরিষ্কার করা, থালাবাটি ধোয়া, খাওয়ানো, বাচ্চাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা প্রভৃতি৷
হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা গবেষণায় দেখেছি, নারীরা ঘরের এই সেবামূলক কাজে প্রতিদিন আট ঘণ্টা সময় ব্যয় করলেও, পুরুষ করে মাত্র এক ঘণ্টা ২০ মিনিট৷ আর সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, নারীর এই সেবামূলক কাজের কোনো মূল্যায়ন নেই৷''
সেবামূলক কাজকেই আসলে ঘর-গৃহস্থালির কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে এই গবেষণায়৷ এর মধ্যে মূলত ছয় ধরনের কাজকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে৷ ১. রান্না করা, ২. বয়স্কদের সেবা করা, ৩. শিশু লালন পালন, ৪. পানি আনা, ৫. জ্বালানি সংগ্রহ করা, ৬. ঘরের অন্যান্য কাজ যেমন – বিছানা পরিষ্কার করা, থালাবাটি ধোয়া, খাওয়ানো, বাচ্চাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা প্রভৃতি৷
তিনি বলেন, ‘‘আমরা গবেষণায় দেখেছি, নারীরা ঘরের এই সেবামূলক কাজে প্রতিদিন আট ঘণ্টা সময় ব্যয় করলেও, পুরুষ করে মাত্র এক ঘণ্টা ২০ মিনিট৷ আর সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, নারীর এই সেবামূলক কাজের কোনো মূল্যায়ন নেই৷''
তিনি বলেন, ‘‘পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মূল্যায়ন না থাকায় নারী প্রচুর কাজ করেও অবহেলিত৷ অন্যদিকে আমাদের মোট জাতীয় আয়েও এর কোনো প্রতিফলন নেই৷'' ‘‘এমনকি নারীদেরও বড় একটা অংশ মনে করেন যে, এটা তাঁদের স্বাভাবিক কাজ৷ তাই এটা তো তাঁদের করতেই হবে৷ এটার আবার মূল্যায়ন কী? তাঁরা অনেকেই তাঁদের এই সময় এবং পরিশ্রমসাপেক্ষ কাজের মূল্যায়ন নিয়ে সচেতন না৷''
‘অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ' এখন বিভিন্ন এলকায় নারীদের এই কাজের মূল্যায়ন নিয়ে কাজ করছে৷ সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করছে৷ পাঁচ হাজার মানুষের মধ্যে একটি সচেতনতামূলক প্রকল্প চালাচ্ছে তারা৷ এতে কেমন ফল পাওয়া যাচ্ছে জানতে চাইলে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘‘আমাদের প্রকল্প এলাকায় ইতিমধ্যেই পাঁচ থেকে দশ ভাগ মানুষ সচেতন হয়েছেন৷ এঁরা গৃহস্থালির কাজকে মূল্যায়ন করতে শুরু করেছেন৷ পুরুষরাও নারীদের এই কাজে সহযোগিতা করছেন৷ কাজ ভাগ করে নিচ্ছেন৷ কিন্তু পুরো দেশের সার্বিক অবস্থার তেমন পরিবর্তন হচ্ছে না৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমরা বলছি না যে নারীদের ঘরের এই সেবামূলক কাজের জন্য অর্থ দিতে হবে৷ আমরা বলছি এটা যদি মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) রূপান্তর করা যায়, তাহলে এই কাজটা যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা সবাই বুঝবেন৷ এই কাজে দক্ষতা বৃদ্ধিতে সরকার উদ্যোগ নেবে৷ আর এই দক্ষতা তারা আয়বর্ধক কাজেও ব্যবহার করতে পারবেন৷''
এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল, বাড়ির বিভিন্ন সেবামূলক কাজে নারী ও পুরুষের সময় ব্যবহারের পরিমাণ নির্ণয় করে ‘জেন্ডার' ভূমিকা সম্পর্কে জানা ও তাতে পরিবর্তন আনা৷
নারীর এই ধরনের সেবামূলক ঘর-গৃহস্থালির কাজের একটি আর্থিক মূল্যায়নের চেষ্টা করা হয় বাংলাদেশ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন' এর যৌথ গবেষণায়৷ গবেষণাটি পচিালিত হয় ২০১৪ সালে৷ গবেষণায় দু'টি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়: প্রতিস্থাপন পদ্ধতি এবং গ্রহণযোগ্য মূল্য পদ্ধতি৷ এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত সিপিডির গবেষণা ‘ফেলো' তৌফিকুল ইসলাম খান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘প্রতিস্থাপন পদ্ধতি হলো – নারীর এই কাজ যদি আমরা বাইরের লোক দিয়ে করাই, তাহলে কত খরচ হবে? আর গ্রহণযোগ্য মূল্য হলো – নারী ঘরে যে কাজ করেন, সেই কাজই বাইরে করলে তিনি কী পরিমাণ পারিশ্রমিক পাবেন৷''
এই গবেষণায় ৬৪টি জেলায় নমুনা জরিপ চালিয়ে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নারীরা ঘরের যেসব সেবামূলক কাজ করে থাকেন, তার পরিমাণ জন প্রতি গড়ে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা৷ একই কাজ পুরুষ করে মাত্র দু'ঘণ্টা৷ তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘আমরা মনে করি, নারীর কাজের আর্থিক মূল্য যদি জিডিপিতে যুক্ত হয়, তাহলে নারীর কাজের মূল্যায়ন এবং ক্ষমতায়ন হবে৷ নারী এবং সমাজ বুঝতে পারবে যে তাদের কাজটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ৷ আমাদের জিডিপির পরিমাণও বাড়বে৷''
ড. নাজনীন বলেন, ‘‘আবার কিছু কাজ আছে, যার আর্থিক মূল্যায়ন করা যায় না৷ মা সন্তানকে ভালোবাসেন – এর আর্থিক মূল্যায়ন কি সম্ভব? ঘরের রান্নার মূল্য আমি কীভাবে দেবো? পাঁচতারা হোটেলের বিবেচনায় না রাস্তার পাশের হোটেলের বিবেচনায়? এছাড়া পুরষও ঘরে ‘আনপেইড ওয়ার্ক' করে৷ সেটাও তো বিবেচনায় রাখতে হবে৷''
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও অবশ্য মনে করেন, ‘‘নারীর ঘরের কাজের অর্থনৈতিক মূল্যায়ন খুবই জরুরি৷ আমাদের দেশে ঘরের সেবামূলক কাজের কোনো মূল্যায়ন নেই৷ সে কারণেই জিডিপিতে এর অন্তর্ভুক্তি হয়নি৷'' এ বছরই ১০ জানুয়ারি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা পরিসংখ্যান বিভাগে যুক্ত করব এবং সরকারি পর্যায়ে নিয়ে যাবো আমরা৷''
Mark it as the brainliest answer.