সমাজ কল্যানে ছাত্র সমাজের ভূমিকা
Answers
Explanation:
ভূমিকাঃ
সমাজ একটা সংঘবদ্ধ ব্যবস্থা, মনুষ্যত্ব বিকাশের ক্ষেত্রভূমি। সমাজের মধ্যে দিয়েই মানুষ তার পাশব প্রবৃত্তিকে অতিক্রম করে মনুষ্যত্ব অর্জন করে। কাজেই যে সমাজ মানুষকে মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করে, তাকে অবশ্যই সুন্দর করে গড়ে তোলা দরকার। এর এ কাজে প্রতিটি সামাজিক মানুষের কিছু না কিছু কর্তব্য থাকে। ছাত্রছাত্রীরাও তার ব্যতিক্রম নয়। অধ্যয়ন ছাত্রছাত্রীদের প্রধান লক্ষ্য, একথা মেনে নিয়েও বলা যায়, অধ্যয়নের পাশাপাশি সমাজের প্রতিও তাদের অনেক কর্তব্য আছে।
সমাজের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের সম্পর্কঃ
ছাত্রগণ ভিন্ন গ্রহবাসী নয়। তারা এই সমাজের সব থেকে প্রাণবান, স্তেজ, বলিষ্ঠতম অংশীদার। তারাই ভবিষ্যৎ সমাজের দায়িত্বশীল নাগরিক, সমাজের মেরুদন্ড। তাই সমাজ যেমন জীবনের প্রস্তুতিপর্বে ছাত্রদের সর্ববিধ সুযোগ-সুবিধা দানের চেষ্টা করবে তেমনি ছাত্ররাও পুঁথিগত পাঠ ছাড়াও সমাজসেবার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে যেখানে অন্যায়, অবিচার, সামাজিক নিষ্পেষণ চলছে তা দূরীভূত করার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
(ক) সেবাপরায়ণতাঃ
জনগণের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করার মধ্যেই নিহিত আছে শিক্ষার সার্থকতা। অল্পবয়সী ছাত্রদের গতিশীল, স্বার্থচিন্তা ও বৈষয়িকচিন্তনহীন নিঃস্বার্থপরতা ও সেবাধর্মে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। এইভাবে ছাত্রমনে সেবাধর্মী পবিত্র আদর্শবোধ চিরস্থায়ী আসনলাভে তাদের এক সংবেদনশীল নাগরিকে পরিণত করবে।
(খ) নিরক্ষরতা দূরীকরণঃ
আমাদের দেশের সার্বিক শিক্ষার অবস্থা খুবই খারাপ। ভারতবর্ষে নিরক্ষরতা একটি সামাজিক অভিশাপ। এই অভিশাপ থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করার জন্য ছাত্রসমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। ছাত্ররা নিজেদের শিক্ষিত করে তোলার সঙ্গে সঙ্গে নিরক্ষর ব্যক্তিদের সাক্ষর করে তোলার উদ্যোগী হতে পারে। ছাত্ররাই ভারতভূমিকে শিক্ষার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত করতে পারে।
(গ) স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষাঃ
আমাদের দেশে সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। গ্রাম ও শহরের নানা জায়গায় নানা রোগের জীবাণু ছড়িয়ে আছে। অপরিচ্ছন্নতা দূরীকরণে ছাত্ররা নিজেরাই হাত লাগায়। গ্রামে ও শহরে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষকে স্বাস্থ্যসচেতন করে তোলে। সমাজের অধিকাংশ লোকই আজ সর্বনাশা ড্রাগের নেশায় আচ্ছন্ন। এই পতনের হাত থেকেও তাদের সুষ্ঠু স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ছাত্রছাত্রীরা অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে।
(ঘ) প্রথা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াইঃ
কুসংস্কারাচ্ছন্ন আমাদের সমাজ। এর কারণ অঞ্জতা এবং প্রথার প্রতি নির্বিচার আনুগত্য। মানুষের অঞ্জতা ও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আজও নানান তুকতাক, তাবিজ-মাদুলি নিয়ে ভন্ড সাধুদের রমরমা চলছে। ছাত্রসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে সমাজকে কুসংস্কারগুলি থেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে। পণপ্রথার মতো একটি সামাজিক পাপের বিনাশেও ছাত্রসমাজকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। তাহলেই ধীরে ধীরে সমাজে প্রথা ও কুসংস্কার বিলুপ্তি সম্ভব হবে।
(ঙ) প্রতিবাদ ও জাতীয় সংহতি রক্ষাঃ
সমাজে প্রতিনিয়ত অন্যায়-অবিচার ঘটেই চলেছে। এসব ক্ষেত্রে ছাত্রদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ বিষ প্রবল হয়ে উঠেছে। এই সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীকে আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হতে হবে। ছাত্রশক্তিই একমাত্র পারে দেশের জাতীয় সংহতি রক্ষা করতে।
উপসংহারঃ
ছাত্রসমাজ একটি বৃহৎ শক্তি। এই শক্তি যদি সমাজকল্যাণে নিয়োজিত হয়, তাহলে সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত। ওরা “পদ্মকোশের বজ্রমণি ওরাই ধ্রুব সুমঙ্গল।” ছাত্রছাত্রীরা সচেষ্ট হলে একদিন না একদিন সেই আদর্শ সমাজ গড়ে উঠবেই। দেশবাসীর কল্যাণ আশিসে তাদের জীবন হবে সার্থক। নির্ভীক সমাজসেবী এইসব পরাগত প্রাণ ছাত্রছাত্রীদের মন্ত্র হোক—
“উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই, ওরে ভয় নাই,
নিঃশেষে প্রাণ, যে করিবে দান ক্ষয় নাই, তার ক্ষয় নাই।”