India Languages, asked by anna1961, 1 year ago

১..বাউল কাদের বলে?
২..বাউলের গান কেমন?
৩..মাঝির গানকে কি বলে?
....
(নম্বর - ৩+৩+১)


উত্তর ..?????


anna1961: plsss answer these questiones

Answers

Answered by DEBOBROTABHATTACHARY
1

বাউল লোকসম্প্রদায়ের একটি সাধন-ভজন গোষ্ঠী, যারা গ্রামে-গঞ্জে গান গেয়ে ভিক্ষা করে বেড়ায়।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এদের দেখা গেলেও সাধারণত কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, যশোর এবং পাবনা অঞ্চলেই এদের বেশি দেখা যায়।

বাউলরা দেহভিত্তিক গুপ্ত সাধনার অনুসারী। এই সাধনায় সহজিয়া ও সুফি সাধনার সম্মিলন ঘটেছে; তবে সুফি ভাবনার প্রভাবই বেশি।

বাউলরা মসজিদ বা মন্দিরে যায় না। কোনো ধর্মগ্রন্থে তাদের বিশ্বাস নেই। মূর্তিপূজা, বর্ণবৈষম্য বা জাতিভেদে তারা বিশ্বাসী নয়। তারা মানবতাবাদী

তাদের বিশ্বাস জন্মগতভাবে কেউ বাউল নয়, গুরুর নিকট দীক্ষা নিয়েই বাউল হতে হয়।

বাউল সাধনা মূলত নারী-পুরুষের যুগলসাধনা। তবে জ্ঞানমার্গীয় একক যোগসাধনাও আছে।

★ বাউল সম্প্রদায়ের উদ্ভব সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য জানা যায় না। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে ‘বাউল’ শব্দের প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। পনের শতকের শাহ মোহাম্মদ সগীরের ইউসুফ-জুলেখা, মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণবিজয়, ষোলো শতকের বাহরাম খানের লায়লী-মজনু এবং কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থে ‘বাউল’ শব্দের ব্যবহার আছে। এ থেকে অনুমান করা হয় যে, অন্ততঃপক্ষে খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতক কিংবা তার পূর্ব থেকেই বাংলাদেশে বাউল সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ছিল।

■ ■ বাউল গান মূলত বাউল সম্প্রদায়ের গান, যা বাংলা লোকসাহিত্যের একটি বিশেষ অংশ। বাউলরা তাদের দর্শন ও মতামত বাউল গানের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করে থাকে। বাউল মতে সতেরো শতকে জন্ম নিলেও লালন সাঁইয়ের গানের মাধ্যমে উনবিংশ শতাব্দী থেকে বাউল গান ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন শুরু করে। তিনিই শ্রেষ্ঠ বাউল গান রচয়িতা হিসেবে বিবেচিত হন।

বাউলরা তাঁদের গানকে ধর্মের অঙ্গ বলে মনে করেন। ধর্মীয় আসর, ওরস উৎসব, ভিক্ষোপজীবিকা ইত্যাদি আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক উপলক্ষে গান করে তারা ধর্মকর্ম পালন করে থাকেন।

তাঁরা ‘দেহতত্ত্বে’র সাধনা দ্বারা পরমাত্মার সন্ধান করেন। মানুষ, মনের মানুষ, অচিন পাখি, মনুরায় প্রভৃতি প্রতীকের ভাষায় তারা পরমাত্মাকে অভিহিত করে। তিনি মানবদেহে বাস করেন।

পরমাত্মার সাথে মানবাত্মার মিলন সাধন তাদের দেহসাধনার মূল লক্ষ্য। অধ্যাত্মপ্রেম তথা ভক্তি দ্বারা এ মিলন সাধন সম্ভব। বাউলদের দেহকেন্দ্রিক অধ্যাত্ম সাধনা গুরু-নির্ভর; গুরুর কাছে দীক্ষা নিয়ে যোগাদি সাধনা এবং নানা আচার পালন ও রীতিনীতি করতে হয়। এ দেহ, আত্মা, পরমাত্মা, গুরু, প্রেম-ভক্তি, সৃষ্টিরহস্য ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে বাউল গান রচিত হয়েছে। এরই সূত্র ধরে আত্মতত্ত্ব, দেহতত্ত্ব, গুরুতত্ত্ব, প্রেমতত্ত্ব, সৃষ্টিতত্ত্ব, মানুষতত্ত্ব প্রভৃতি বাউল গানে স্থান পেয়েছে। বাউল গানের আত্মতত্ত্বে মনের প্রস্ত্ততি, দেহতত্ত্বে সাধনার রীতি-পদ্ধতি, গুরুতত্ত্বে গুরুর চরণ শরণ, সৃষ্টিতত্ত্বে জীবসৃষ্টির রহস্য এবং মানুষতত্ত্বে পরমাত্মার মিলনাকাঙক্ষা ব্যক্ত হয়েছে।

■■■ মাঝির গান কে সারি গান বলে

মধ্যযুগের কবি বিজয় গুপ্তের পদ্মাপুরাণে প্রথম সারি গানের উল্লেখ পাওয়া যায়।

সেখানে সঙ্গীতের সমার্থক শব্দ রূপে ‘সারি’ শব্দটির ব্যবহার হয়েছে।

পরবর্তীতে মোগল বাদশাহদের নৌ বাহিনীর দ্বারা নৌকা বাইচের গোড়াপত্তন হলে এর ব্যাপক প্রসার ও প্রচার ঘটে।

সারি গান মূলত সমবেত কণ্ঠে পুরুষরা গেয়ে থাকে।

★★ সারি গানের গায়েনদের মধ্যে একজন বয়াতি (নৌকা বয় যে) মূল গানটি গায়। আর বাকিরা দুয়া বা দিনা ধরে তালে তালে সমবেত কণ্ঠে গেয়ে চলে। পালাক্রমে বয়াতি ও দোহারদের মধ্যে এভাবে সারি গান এগিয়ে চলে। সারি গান মাঝি-মাল্লা ও শ্রমিকরা কাজের তালে তালে তাল রক্ষা করে গেয়ে থাকে যেমন, নৌকার বৈঠা উঠা-নামার তালে তালে, ছাদ পেটানোর তালে তালে, গাছ কাটার তালে তালে এ গান গাওয়া হয় বলে সারি গান মূলত তাল-প্রধান। সারি গান অবস্থাভেদে দ্রুত ও ধীর লয়ে গাওয়া হয় যেমন, নৌকা বাইচের সময় নৌকা দ্রুত ছুটে চলে তাই তখন দ্রুত লয়ে গাওয়া হয়। তবে সাধারণত মাঝি-মাল্লারা নদীর বুকে দাঁড় টানার সময় ধীর লয়ে গেয়ে থাকে।

(■ ছবি - বাউল গানের প্রবর্তক লালন শাহ'র । তাঁর জীবদ্দশায় তৈরি করা একমাত্র চিত্র, ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে এঁকেছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর)

Attachments:
Similar questions