সাহিত্য পাঠের প্রয়োজনীয়তা রচনা 200-250 শব্দের মধ্যে
Answers
Answer is given below.
Explanation:
সাহিত্য পাঠের প্রয়োজনীয়তা
ভূমিকা :-
মহাকবি মিলটনের অমর মহাকাব্য "প্যারাডাইস লস্ট''-এর আবৃত্তি শুনে নিউটন নাকি বলে ছিলেন,"After all,what does it prove?"
নিউটন বৈজ্ঞানিক।পর্যবেক্ষণ,তথ্য প্রমান এবং পরীক্ষণের মাধ্যমে তিনি বৈজ্ঞানিক সত্যকে যাচাই করেন,প্রমান করেন।সাহিত্যের কাছেও তিনি তা দাবী করেছেন।একথা ঠিক সাহিত্য আমাদের অভাব-অনটন,ভাত-কাপড়, বেকারী,আবাসন প্রভৃতি সমস্যার সমাধান করতে পারে না ।বরং সাহিত্য আমাদের বাস্তব থেকে এক অলিক কল্পনার জগতেই নিয়ে যায়।তাই সাহিত্য পাঠের কোন আবশ্যিকতা আছে কিনা সে প্রশ্ন ওঠেই।
সাহিত্য পাঠের প্রোয়োজনীয়তা :-
মানুষ মননশীল জীব।অন্যান্য প্রাণীদের মত সে শুধু খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে না।বাঁচার জন্য তার মননশীলতার চর্চারও প্রয়োজন।এই মননশীলতার চর্চা করতে গিয়েই সে সৃষ্টি করেছে সাহিত্য ,বিজ্ঞান,শিল্প প্রভৃতি বিষয়।এগুলির কোনটিকেই তার জীবন থেকে বাদ দেওয়া চলে না।তাই শুধু বিজ্ঞান নয়,সাহিত্য,শিল্প প্রভৃতি বিষয়ের চর্চাকেও জীবনে গুরুত্ব দিতে হবে।
মানবজীবনে সাহিত্য পাঠের প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়:-
জ্ঞানের সঞ্চার :---রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন :
বিশাল বিশ্বের আয়োজন ;
মন মোর জুড়ে থাকে অতি ক্ষুদ্র তারি এক কোণ ।
সেই ক্ষোভে পড়ি গ্রন্থ ভ্রমণ বৃতান্ত আছে যাহে
অক্ষয় উৎসাহে।
কাল অনন্ত।পৃথিবী বিপুলা।অনন্ত কালের মাঝে জীবন ক্ষণস্থায়ী বুদবুদের মত।এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে পৃথিবীর বিপুল আয়োজন প্রত্যক্ষ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।কিন্তু যারা পৃথিবীকে অল্প-বিস্তর প্রত্যক্ষ করেছেন তারা তাদের অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান লিপিবদ্ধ করে গেছেন গ্রন্থের আকারে।সেই গ্রন্থ পাঠ করে আমরা পৃথিবীর অপার রহস্যকে মানসচক্ষে প্রত্যক্ষ করতে পারি।এই জ্ঞান পরোক্ষ হলেও এর থেকে যে আনন্দ আমরা পাই তার মূল্য অপরিসীম।সাহিত্য পাঠের মধ্য দিয়েই হয় জ্ঞানের প্রসার,সভ্যতার অগ্রগতি।এক যুগের মানুষ তাদের জীবন চর্চা, অনুভূতি,সাফল্য ও ব্যর্থতার কারন প্রভৃতি সাহিত্যের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করে যান।পরবর্তী কালের জ্ঞান পিপাসু মানুষ তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান তাতে সংযোজিত করে গ্রন্থর আকারে রেখে যান উত্তর পুরুষের জন্য। এভাবেই হয় সভ্যতার অগ্রগতি,জ্ঞানের প্রসার।
দূর্গম পৃথিবীর সংবাদ লাভ :-
জ্ঞান পিপাসা মানুষের অন্তরের প্রবৃত্তি।সে অজানাকে জানতে চায়,অচেনাকে চিনতে চায়,অদেখাকে দেখতে চায়।এজন্যই সে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে পরে পথে,--স্বীকার অনেক কষ্ট ও দুঃখকে।পৃথিবী বিপুলা।এর কোথাও আছে দূর্গম গিরি ,কোথাও কান্তার মরু ,কোথাও বা দুস্তর পারাবার।এসব জায়গায় আমাদের সকলের পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া আমাদের ছোট্ট জীবনে পৃথিবীর এই বিশাল আয়োজন প্রত্যক্ষ করাও যায় না।কিন্তু যারা কিছুটা অন্তত প্রত্যক্ষ করেছেন তারা তাদের ভ্রমনলব্ধ জ্ঞান লিপিবদ্ধ করে গেছেন তাদের ভ্রমণ কাহিনীতে।এইসব ভ্রমণ কাহিনী পাঠ করেই আমরা জানতে পারি বিভিন্ন দেশের ভূ -প্রকৃতি, জলবায়ু ,ফসল ,পশু-পাখি ও বিভিন্ন জনগোষ্ঠির আচার-আচরণ ও জীবন যাত্রার কথা।
জীবনী সাহিত্য পাঠ :-
মহাপুরুষদের জীবনী ও বানী সমন্বিত জীবনীসাহিত্য আমাদের জীবন পথের পাথেয় স্বরূপ।দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ণয়ে ,আদর্শ স্থাপনে ,চরিত্র গঠনে এবং শোকের সান্ত্বনায় এই ধরনের গ্রন্থগুলি আমাদের জীবনে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা গ্রহণ করে।
উপসংহার :-
পার্থিব উন্নতির জন্য বিজ্ঞান চর্চা ও বিজ্ঞানের উন্নতি অবশ্যই প্রয়োজন,কিন্তু মানসিক উন্নতির জন্য,মানসিক তৃপ্তির জন্য সাহিত্য চর্চাকে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে। সাহিত্যপাঠ একটি সুঅভ্যাস। ছোট বেলা থেকেই এই অভ্যাস আয়ত্ত করা প্রয়োজন।
এ ব্যপারে গ্রন্থ নির্বাচনেও বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।বড়দের জন্য লেখা বই কখনই ছোটদের পাঠ করা উচিত নয়।এ ব্যাপারে পিতা,মাতা,শিক্ষক ও লাইব্রেরিয়ানদের বিশেষ সতর্ক থাকা প্রয়োজন
সভ্যতার আদিমতম কাল থেকে মানুষের সৃষ্ট যে উপাদানগুলি পৃথিবীতে অনন্য এবং অভূতপূর্ব, তার মধ্যে একটি যদি হয় প্রযুক্তি তবে অবশ্যই অন্যটি হলো সাহিত্য। সাহিত্য হল মানব মনের সবচেয়ে সুস্পষ্ট দর্পণ। এই দর্পণে প্রতিফলিত হয় মানব জীবনের সকল অপূর্ণ ইচ্ছে, পেতে চাওয়ার বাসনা, আর সৃষ্টি করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা। প্রযুক্তির মতন সাহিত্যকে কেউ বিজ্ঞানের যুক্তির বেড়াজালে বন্দী করে দেয় না।
সাহিত্য বাস্তব আর কল্পনার অদ্ভুত মিশেলে মনের ডানায় ভর করে পাতাললোক থেকে মহাশূন্য সর্বত্র নির্দ্বিধায় বিচরণ করে বেড়ায়। তাই যে মানুষ সাহিত্য পাঠ করে না সে সাহিত্যের এই অমৃতসুধা আহরণ থেকে বঞ্চিত থাকে। তার মন সাহিত্যের বাধাহীন ডানায় ভর করে সৃষ্টির অনন্ত স্বাদ আস্বাদনের জন্য প্রস্ফুটিত হতে পারেনা। এই কারণে একজন মানুষের জীবনে সাহিত্য পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম এবং এতটাই অধিক যে তাকে অন্য কোন কিছুর সাথে তুলনা করা যায় না।