India Languages, asked by anna1961, 1 year ago

রাজপথের আত্মকথা...২০০ শব্দে...

Answers

Answered by simransahu94
3
dkgdfkvlkddfhknvxxjnv
Answered by guptasingh4564
8

Answer is given below.

Explanation:

Given,

রাজপথের আত্মকথা...২০০ শব্দে...?

                                     পথিক, সামনে রেড সিগন্যাল! পথ-যাত্রার নিত্য অশুভ বিড়ম্বনা | আমি জানি- তোমার গন্তব্য পৌঁছতে কতক্ষণ লাগবে! অতএব- তোমার তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব দূর করতে আমি বরং গল্প শুনাই- আমি রাজপথ! মানে রাজারপথ! রাজার চরণ -ধূলি আপাদ মস্তক মহার্ঘ অলংকারের ন্যায় উদ্ধত প্রকাশ পেয়েছিলো বলেই, বলতে পারি আমি ‘রাজপথ’ | আমার জন্ম নিয়ে মতভেদ আছে, এটা ছিল প্রাচীন ভারত বর্ষের একটি উপনিবেশ মানে আমার আঁতুড় ঘর ঢাকা| ‘ঢাকা’ নামকরণ নিয়েও একটু খোলাসা করেই বলি| কথিত আছে, সেন বংশের রাজা বল্লান সেন নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণ কালে একটি জঙ্গলে হিন্দুদের দেবী দূর্গার একটি বিগ্রহ খুঁজে পান| দেবীর সন্মান স্বরুপ একটি মন্দির স্থাপন করেন, যেহেতু দেবীর বিগ্রহটি গুপ্ত বা ঢাকা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিলো তাই মন্দিরের নামকরণ করেন ঢাকেশ্বরী মন্দির| মন্দিরের নাম থেকেই কালক্রমে স্থানটির নাম ঢাকা|

                                         ৭০০ খ্রিঃথেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ঢাকা অঞ্চলটিতে শহর গড়ে ওঠে | আবার ঐতিহাসিকদের মতে- মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকাকে সুবাহে বাংলার রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করেন | তখন সুবেদার ইসলাম খান আনন্দের বহিঃপ্রকাশ স্বরুপ শহরে ‘ঢাক’ বাজানোর নির্দেশ দেন, সেই ‘ঢাক’ থেকেই আজ ঢাকা| আমার শৈশব ছিল পুলক-রোমাঞ্চকর| ভোর না তেই বুড়িগঙ্গয়া থেকে স্মান-ফেরত বঁধূর ভেঁজা শীতল চরণে আমার ঘুম ভেঙ্গে যেত| প্রভাতে সূর্যোদয়ের সময় স্বর্ণ রশ্মি যখন যৌবন প্রাপ্ত বুড়িগঙ্গয়ার অস্থির ঢেউয়ে প্রতিফলিত হত, আমি জড়-ভাবুক হয়ে যেতাম| সারাদিন বনফুলের সাথে ধুলোকণা দিয়ে হেসে খেলে কেটে যেত | রিক্সা কিংবা টমটম গাড়ীর টুংটাং ধ্বনিতে আমার সকল ইন্দ্রীয় শিহরিত হয়ে ওঠতো| রাজা তাঁর সৈনিকসহ আমার বক্ষ দিয়ে যখন ধপ্ ধপ্ করে চলত তখন ভয়ে কুঁকড়ে যেতাম| ইখতিয়ার উঃ মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজির সতের জনের অশ্বারোহীর পদাঘাতের চূর্ণ-বির্চূণ ধূলি-কণা, কি্ংবা নবাব সিরাজদৌলার পরাজিত পদধূলি আমাদের পথেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে| ক্রমশই আমার অবয়ব আকৃতি এবং কাঠিন্য পেতে লাগলো, অলি-গলি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়লাম সর্বত্র| মাঝে মাঝে রোমাঞ্চ জাগে যখন কোনো রমণী নুপুর পায়ে রিনিঝিনি শব্দে হেঁটে যায়, তখন কেনা প্রেমিক বনে যায়! মজা লাগে, যখন তোমাদের মধ্যে কত চড়ক গাছ প্রেমিক দেখি ম্যান হোলে হাবুডুবু খায়| এখন আর নেই সেই স্বর্ণালী মূহূর্ত গুলো, সবাই ঢালাই করা মোটা জিন্স পরে চটি পায়ে চটপট হেঁটে যায় বোঝার উপায় থাকেনা কোনটাকপোত কোনটা কপোতি| চারদিকটা বৈশাখের মধ্যদুপুরের মতো উত্তপ্ত খাঁ খাঁ, সবাই ত্রস্ত ,ব্যস্ত পায়ে ছুটছে শুধু ছুটছেই|

                                                  আজ আমি সংকীর্ণ,শীর্ণ এবং বয়োবৃদ্ধ | আমার কাঠামো তোমরাই বদলে দিয়েছো, যখন মাল বোঝাই লরি, ট্রাক কিংবা ট্রাম আমার বক্ষ পিষে চলে যায় তখন ক্ষত-বিক্ষত ঢাকার জন্যে তোমরা উত্তপ্ত কালো পিচ এবং কংক্রীট দিয়ে ঢালাই করে দাও যাতে আরো বেশী যন্ত্রণা বইতে পারি| তোমাদের পদাঘাতে আজ আমি বোবা, কৃষ্ণ-পাথর হয়েছি| তোমাদের অযত্নে আমি সঙীন, ভেতরটা সমস্ত পুঁতি গন্ধময় পাইপে ফাঁপা বক্ষটা মাত্র কয়েক ইঞ্চি পুরো কংক্রীটের আস্তরণ| এইতো কয়েকদিন আগেও তোমরা স্বচক্ষে দেখতে পেলে, একটু বৃষ্টি হলেই আমি সাগরের মত একাকার হয়ে যায়, দিন-রাত্রি অবগাহন করতে হয়| তুমি কি ভেবেছো এটা শুধুই বৃষ্টির জল? এটা কি আমার সুপ্ত জমাট অশ্রু নয়? বলতে পারো আমি প্রচন্ড অভিমানী | আর- তোমাদের মধ্যে যারা সর্বহারা,অর্থ্যৎ যাদের ভিতে তোমাদের অট্রালিকা এতো উঁচু বিশ্বাস করো-তাদের আমার দু’বাহুতে ঘুমপাড়াই, সারারাত খোলা আকাশে তারাদের গল্প বলি । মাঝে মাঝে হঠাৎ যখন রাতের স্তব্ধ ভেঙ্গে আকাশ থেকে বৃষ্টির ঢল নামে করুণ ঘুমন্ত মুখ গুলোর উপর,তারা নিষ্ফল গুমরে ওঠে, ভেঁজা করুণ আর্তনাদের চোখ নিয়ে আবার ঘুমাবার জন্য আঁধারে চোখ বুঁজে, এই ক্লান্ত অবসরটুকু সঞ্চয় করে তারা আরও একটি দিনের জন্য, সকালেই যে জাগতে হবে অগ্নিপিন্ড সূর্যের সাথে! তারা প্রভাতে ওঠেই সারারাত লেপ্টে থাকা আমার চুম্বনের দাগগুলো ঝেড়ে ফেলেই, ক্ষুধার্ত মলিন চোখ গুলো কঁচলিয়ে কাজে নেমে যায়| কিন্তু আমি তো জড়, নিশ্চল ঠাঁই দিতে পারি, আগলে রাখতে পারিনা! তবুও আমিপথ, তোমরা পথিক! তোমার-আমার সম্বন্ধ মহাকালের| তোমরা নশ্বর, আমি অবিনশ্বর | তোমরা আসা-যাওয়া করো কাল থেকে মহাকালে, আমি স্থির, তোমাদের মধ্যে থেকে কতো শতো নন্দিত, নিন্দিত, দূর্ধষ ও অমর ব্যাক্তির শে্য পদধূলো আমার কাছে লুটুপুটি খায়, কিছু ধূলো-কণা আগলে রাখি পৃথিবীতে নতুন কোনো পথিকের অভ্যর্থনায়| কাঠামো কিংবা অবয়ব হয়তো পালটে যাবে কিন্তু আমার ধর্ম এক পথিকের পথ হওয়া|

                                                           ইদানিং আমার বড্ড হাসি পায়, তোমাদের মিছা-মিছি সত্ত্বার অভিনয় দেখে! আমিতো দেখি সমস্ত মানব জাতির হাত-পা, আকৃতি অবিকল এক! স্বরও এক, একিই প্রভুর প্রার্থনা করো| বিস্মিত হই! যখন দেখি কিছু কিছু হাত-পা, মগজ অন্য কোন ব্যক্তি সত্ত্বার নিকট দায়বদ্ধ!! যেসব ব্যক্তির কল্যাণে তোমাদের মধ্যে দূর্ধান্ত প্রভাবশালী, পশ্চাতে সেই ব্যক্তিদেরকেই বড্ড ভয়!

                                                          ঢাকার প্রসঙ্গ এ আসি| এই শহরে ১২ মিলিয়ন লোকের বাস| প্রতিদিন রাস্তা-ঘাট বিভিন্ন যান-বাহন এ মানুষে সয়লাব হয়ে যায়| তোমাদের মধ্যে কথিত কোন ভিআইপি বাবু যদি রাস্তায় বের হন, তবে তো কথায় নেই, রাজপথ ধূ-ধূ খালি করে দেয়া হয়, সাধারণ যাত্রী এমন কি অ্যাম্বুল্যান্স ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রেখে|রোগী যন্ত্রণায় কাতরায়, নিশ্চল যানের লাল লাইট যখন আরো স্থবির হয়ে আরো লাল বর্ণ ধারণ করে এটাই রাজপথের দগ্ধ হৃৎপিন্ড| এটাই রাজপথের অবিচার| তবেহ্যাঁ, অধিষ্ঠিত কোনো সিংহাসনের বড্ড ভয় রাজপথে তোমাদের সম্মিলিত পদ-ধ্বনি, এটা নিমর্ম সত্য আমার প্রতিটি ধূলি-কণা তা জানে|

Similar questions