essay on durga puja in bengali for class 6
Answers
Answer:
ভূমিকা:
বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপূজা।
বর্ষার কালো মেঘ সরিয়ে শরতের রোদ্দুর উকি দিলেই বাঙালির মন হিসেব কষতে শুরু করে দুর্গোৎসব আর কতদিন বাকি। প্রতিদিনের গতানুগতিক জীবনে ব্যাস্ত বাঙালি এক বছর প্রতীক্ষা করে এই পূজার জন্য।শরৎ কালে এই পূজা হয় বলে এই পূজা শারদোৎসব নামেও পরিচিত।ধনী গরীব,নর নারী,শিশু বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকল মানুষের মিলনের এমন সার্বজনীন ভাবটি অন্য আর কোনো উৎসবে সেভাবে দেখা যায়না।
দুর্গাপূজার ইতিহাস:
দুর্গা পূজা কবে, কখন, কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল তা ঠিক করে বলা যায় না।
দুর্গাপূজার ইতিহাস অনেক সুদীর্ঘকালের।হিন্দু পুরাণে কথিত আছে, পুরাকালে রাজা সুরথ তার হারিয়ে যাওয়া রাজ্য ফিরে পাওয়ার জন্য দেবী দুর্গার পূজা করেন। তখন এই পূজা হতো বসন্ত কালে।এবং রামায়ণে উল্লেখ আছে শ্রী রামচন্দ্র শরৎ কালে সীতা উদ্ধারের জন্য দেবী দুর্গার আরাধনা করেছিলেন।সেই সূত্র থেকেই চারশো বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের দেশে শরৎ কালে দুর্গা পূজা হয়ে আসছে।শরৎ কালের এই পূজা এ জন্য অকালবোধন নামেও পরিচিত।বাঙালির দুর্গোৎসব ইতিহাসের অশ্রুসিক্ত অধ্যায়ের আবেগময় এক স্মৃতিচারণ।
উৎসবের পটভূমি:
এই দুর্গোৎসবের পটভূমি অপূর্ব সুন্দর।বর্ষার বৃষ্টি ধোয়া নীলাকাশে সোনালি রোদ্দুরের আলপনা।শিশির ভেজা দূর্বা ঘাসে ঝরে পড়ে মুঠো মুঠো শিউলি।শরতের সাদা কাশফুলে ভরে হয়ে ওঠে বাংলার মাঠ।দুর্গা মাকে আগমন জানিয়েই যেনো প্রকৃতি সেজে ওঠে এক অপূর্ব সুন্দর সাজে।শরৎ এলেই বাংলার বুকে বেজে ওঠে ঢাকের বাদ্যি।শ্রী রামচন্দ্র শরৎ কালে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেছিলেন।বাঙালি প্রতি শরৎ ঋতুতে মা দুর্গার বোধন করে সেই ঐতিহ্যকে আজও বহন করে চলেছে।
সার্বজনীন পুজো:
আগে দুর্গোৎসব জমিদার বা উচ্চবিত্ত বাড়িতে অনুষ্ঠিত হতো।সকল বাঙালির মনে সেই উৎসবের স্পর্শ লাগলেও সকলের তাতে অধিকার ছিলনা।আজ আর এই উৎসব শুধু কতগুলো ধনী বাড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।আজ উৎসবের পরিধি বেড়েছে অনেক গুণ পুজো এখন সার্বজনীন মানে ধনী, গরীব, জাত ,পাত ,ধর্ম নির্বশেষে সবার।সকলের কাছে চাঁদার টাকা গ্রহণ করে প্রত্যেক পূজা কমিটি পূজা পরিচালনা করেন।প্রশাসনিক সতর্কতায় নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ ভাবেই অনুষ্ঠিত হয় সার্বজনীন পুজো গুলি।
পুজোর কয়েকটা দিন:
পৌরাণিক তথ্য অনুসারে,শ্রী রামচন্দ্র শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতে দেবীদুর্গাকে বিল্ববৃক্ষে আরাধনা করে মন্ত্র পাঠ করে পূজা করেছিলেন।এরপর থেকে ওই তিথি ধরেই মায়ের পূজা করা হয়।শুক্লা সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী- এ তিনদিন সাড়ম্বরে দেবীদুর্গার পূজা করা হয়।অন্য যেকোনো উৎসবের চেয়ে এর আড়ম্বোর অনেক বেশি।এ কেবল দেবী দুর্গার একার পূজা নয়। দেবীদুর্গার পূজা উপলক্ষে আরও অনেক দেব-দেবীর পূজা করা হয়।সব নারীর মধ্যেই দেবী দুর্গা বিরাজ করে তাই অষ্টমীতে কুমারী পূজা করা হয়।অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিস্থলে সন্ধি পূজা করা হয়।সব শেষে দশমী পূজা । একে বলা হয় ‘বিজয়া দশমী’।এই উৎসব শুধু পুজোতেই সীমাবদ্ধ থাকে না সম্প্রতি সার্বজনীন পূজা গুলির মধ্যে শুরু হয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা।নানান রকমের বিশাল প্যান্ডেল, থিম,আকর্ষণীয় লাইট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সব মিলিয়ে পুজোর এই কয়েকটা দিন বাঙালির হৃদয় ও মনকে এক পরিছন্ন আনন্দে উদ্ভাসিত করে তোলে।
উপসংহার:
উৎসবের দুটি দিক,এক ব্যাক্তির,আর এক সমষ্টির।দুর্গা পুজোয় মূলত সমষ্টির সমাবেশ।কিন্তু ব্যাক্তি মানুষ সাড়া না দিলে সমষ্টির উৎসবও ম্লান হয়ে যায়। ব্যাক্তিগত জীবনে কেউ হিন্দু,কেউ মুসলিম, কেউ শিখ, কেউ বা ধর্মে বিশ্বাসী নয়, কেউ ধনী ,কেউ গরীব,তবু সব ভেদাভেদ দূরে সরিয়ে সবাই মিলেমিশে আনন্দে এই উৎসবে মেতে ওঠে।জাত,পাত,ধর্ম,বর্ন নির্বিশেষে সবাই বাঁধা পড়ে প্রীতির বন্ধনে।এখানেই দুর্গাপূজার সার্থকতা।